Akashvani: আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন পরেই দুর্গাপুজো। বাঙ্গালীদের সবথেকে বড় উৎসব হলো এটি। আর এদিকে আবার পিতৃপক্ষের অবচার হয়ে দেরিপক্ষের সূচনা হলো মহালয়ার দিন।
আমরা প্রতিটা বাঙালি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে চণ্ডীপাঠ শুনেই ছোট থেকে বড় হয়েছি। মহালয়ার দিন ভোরবেলা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহালয়ার না শুনলে যেন মনে হয়, মহালয়াটা আর মহালয়ার মত নেই। এদিকে আবার বাঙালির কাছে সর্বকালের সেরা মহানায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। উত্তম কুমার এর মহানায়কে দক্ষতা নিয়ে দ্বিমত হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না কারো মধ্যে। কিন্তু মহানায়ক হওয়া সত্ত্বেও একদিন আমাদের বাঙ্গালীদের আবেগের কাছে ওনাকে হেরে যেতে হয়েছিল। মহানায়কের এই বাঙ্গালীদের আবেগের কাছে হেরে যাওয়ার পৌঁছনে রয়েছে এক বিরাট বড় ইতিহাস। ইতিহাসটা এবার চলুন আমরা আলোচনা করব।
মহানায়কের কন্ঠে মহালয়া শুনে আকাশবাণী অফিসে ভাঙচুর :
আমরা প্রতি বছরই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহালয়ার শুনি ও সেটা উপভোগ করি। কিন্তু উত্তম কুমার যেহেতু বাঙ্গালীর চিরকালের সেরা মহানায়ক। তার জন্য ওনার এই জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্য করেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পরিবর্তে চন্ডীপাঠ করানো হয়েছিল আকাশবাণীর অফিসে মহানায়ক উত্তম কুমারকে ।
যতদূর জানা যায়, তিনি মহালয়া চন্ডী পাঠ করার এই প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হননি, অনেক জোরাজুরি করে উনি এই কাজটি করতে রাজি হন। কিন্তু হঠাৎই বীরেন ভদ্রর বদলে উত্তম কুমারের কন্ঠে মহালয়া শুনে কেঁপে উঠেছিল সমস্ত বাঙালি। রেডিওতে উত্তম কুমারের কন্ঠ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আকাশবাণী অফিসে হয়েছিল প্রহর বিক্ষোভ, এর পাশাপাশি হয়েছিল রীতিমত প্রবলভাবে ভাঙচুর রেডিও অফিসে।
এবার কলকাতার বাবুঘাটে তর্পণ করতে এসে মহানায়ককে গালিগালাজও করেছিলেন। বীরেন ভদ্র প্রতিবছর মহালয়ার দিনে চণ্ডীপাঠ এর যে অনুষ্ঠানটা করতেন, তার নাম ছিল “মহিষাসুরমর্দিনী”। কিন্তু সেবার উত্তম কুমারের কন্ঠে ওই অনুষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ” দেবীং দুগর্তিহারিনীম”। উত্তম কুমার দেবীর চণ্ডীপাঠ করেছিলেন মহালয়া দিন সেদিন আবার ওখানকার সংগীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু বীরেন ভদ্রর জনপ্রিয়তার কাছে মূলত মহানায়কের চণ্ডীপাঠ একদম ম্লান হয়ে গিয়েছিল। কেননা বাঙালির চিরকালের ভালোবাসার মহালয়া এর চণ্ডীপাঠ শুনতে চেয়েছিল বীরেনভদ্রের কন্ঠেই। কিন্তু মহালয়ার দিন ভোর 5টার সময় যখন চণ্ডীপাঠ শুরু হয়, তখন শোনা যায় বীরেন ভদ্র বদলে অন্য এক কন্ঠ। মূলত এই কারণেই সেদিন বাঙালিরা ক্ষেপে উঠেছিল।
এর ফলে ঐদিন আকাশবাণী অফিসে জমা পড়ে হাজারো অভিযোগ ও আসে প্রচুর টেলিফোন। ওই সমস্ত অভিযোগ ও টেলিফোনের মধ্যে সবার একটাই দাবি উত্তম কুমারের কন্ঠে নয় আমরা মহালয়া চন্ডীপাঠ শুনতে চাই শুধুমাত্র বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে। ফলে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই ওই বছরই ষষ্ঠীর দিন ভোরবেলা মহালয়ার অনুষ্ঠানকে পুনরায় সম্প্রচারিত করে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে। এরপর মহালয়া নিয়ে বাঙালির এই আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আকাশবাণী আর কোনো বছর ভুল করেনি। মহালয়া দিন এরপর থেকে প্রতিটা বছর চন্ডীপাঠ এর জন্য শোনা যায় বীরেনদ্রের কন্ঠ। এমনকি তিনি গত হয়েছেন অনেকগুলো বছর হয়ে গেল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাঙালি আবেগকে মূলত শ্রদ্ধা জানিয়েই আকাশবাণী ভবন এখনো ওনার রেকর্ডিং সংস্করণ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতি বছর।