Sunita Williams: প্রাণপণ চেষ্টা করেও পৃথিবীতে ফিরতে পারছেন না ! মহাকাশে বসে বসে কাদছেন সুনিতা এবং ব্যারি উইলমোর ?

সুনিতা উইলিয়াম হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন মহাকাশচারী। তার সঙ্গী ব্যারি উইলমোর ছিলেন একজন আমেরিকান মহাকাশচারী।

Sunita Williams: প্রাণপণ চেষ্টা করেও পৃথিবীতে ফিরতে পারছেন না ! মহাকাশে বসে বসে কাদছেন সুনিতা এবং ব্যারি উইলমোর ?
Published On:

Sunita Williams: পৃথিবীর বাইরেও রয়েছে একটি বাড়ি বাড়ি। আজ থেকে প্রায় 24 বছর আগে 2000 সালে যে বাড়িতে প্রথম অতিথির আগমন হয়েছিল। তারপর থেকেই ওই বাড়িতে আর কখনো শূন্য হয়নি । অতিথির আগমন প্রায় দিনই লেগেই থাকে ওখানে। কিন্তু স্থায়ীভাবে কেউই থাকেন না ওখানে। কেউ কেউ আবার অতিথি হয়েছে এ বাড়িতে গিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু অবশ্যই নির্ধারিত করার সময়ের বেশি ওখানে কেউই থাকেন নি। কিন্তু এবার সেই নিয়ম ভঙ্গ হল। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের দুই অতিথি মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি উইলমোর এই বাড়িতে আটকে পড়েছেন। কিন্তু কোথায় সমস্যার জন্য এমনটা ঘটেছে? কেন তাদের এখনো পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিক। সেগুলি আমরা এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন :

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত বিশেষজ্ঞ কৃত্রিম উপগ্রহ। এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ তৈরি করেছে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, জাপান এবং কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। যেটা তৈরি হয়েছিল 1998 সালে এবং প্রথম সেখানে একদল মহাকাশচারীর আগমন ঘটেছিল তার দুই বছর পর অর্থাৎ 2000 সালে। তারপর আর কোন সময় ফাঁকা হয়নি বললেই চলে ওই মহাকাশ স্টেশন। একে একে একাধিকবার বিভিন্ন মহাকাশচারী ওখানে গেছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরেও এসেছেন। গবেষণা হয়েছে গত 24 বছর ধরে একাধিক । কোন কোন মহাকাশচারী আবার একাধিকবারও গেছেন সেখানে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন আন্তর্জাতিক এই মহাকাশ স্টেশনের আয়ু এখনো 7 বছর আছে, অর্থাৎ এখানে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা যেতে পারবে আগামী 2031 সাল পর্যন্ত।

সুনিতা উইলিয়ামস্ এবং ব্যারি উইলমোর এর মহাকাশ যাত্রা ঠিক কেমন ছিল :

সুনিতা উইলিয়াম হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন মহাকাশচারী। তার সঙ্গী ব্যারি উইলমোর ছিলেন একজন আমেরিকান মহাকাশচারী। এনারা দুজনে এর আগেও মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন।

সুনিতা উইলিয়ামস প্রথম মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন এখন থেকে প্রায় 18 বছর আগে অর্থাৎ 2006 সালে। পরে আবার দ্বিতীয়বার সেখানে যান তিনি 2012 সালে। সেই হিসেবে এবারে তৃতীয়বারের জন্য 59 বছর বয়সে ওই মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন ভারতীয় বংশের গত মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস্।

এদিকে আবার ব্যারি উইলমোর প্রথমবারের মতো মহাকাশ স্টেশনে গেছিলেন এখন থেকে প্রায় 15 বছর আগে 2009 সালে। পরে দ্বিতীয়বার তিনি সেখানে যান 2009 সালে। অর্থাৎ সেই হিসেবে এবারে তৃতীয়বারের জন্য 61 বছর বয়সে মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন আমেরিকান মহাকাশচারী ব্যারি উইলমোর।

সুনিতা ও ব্যারির এবারের মহাকাশযাত্রা কেন আলাদা ?

তৃতীয়বারের জন্য দুজনেই মহাকাশ স্টেশনে পাড়ি দিয়েছেন বোয়িং কোম্পানির তৈরি মহাকাশ স্টারলাইনার চড়ে। এই কোম্পানিটি বিমান তৈরি করে। প্রথমবারের মতো কোনো মহাকাশযান এই কোম্পানির মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে। সেই পরিপেক্ষিতেই এই নতুন মহাকাশ যাত্রাযর সাথী মহাকাশ যাত্রীর নাম রাখা হয়েছে Boying Scroo Flight Test । এই মহাকাশযানটি মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে গত 5 জুন, 2024 তারিখে। যেখানে সুনিতা উইলিয়ামস হলেন পাইলট এবং ব্যারি উইলমোডর হলেন কমান্ডার। পৃথিবী থেকে মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে ওই দুই মহাকাশচারীর সময় লেগেছিল প্রায় 27 ঘন্টা মতো। সুনিতা এবং ব্যারির মহাকাশ স্টেশনে থেকে রিসার্চ করার সময় ছিল 8 দিন, কিন্তু এখন পর্যন্ত 3 মাস কেটে গেছে, তারা এখনো মহাকাশযানেই রয়েছে।

5 জুন এই দুই মহাকাশচারী মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল বটে। কিন্তু, এদের মহাকাশ যানে চেপে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল 6 মে তারিখে। তার জন্য সমস্ত রকম প্রস্তুতি প্রায় হয়ে গিয়েছিল বললেই চলে। কিন্তু, ঠিক মহাকাশযান পাড়ি দেবার 2 ঘন্টা আগে সেই যাত্রাটিকে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা কেন করা হয়েছিল?

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে যে, মহাকাশযানে অক্সিজেন ভল্টের সমস্যার জন্য এটা করা হয়েছিল। তারপরে 1 জুন ফের নতুন করে উড়ানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ওটাকেও বাতিল করা হয়। কিন্তু সেটা করা হয়েছিল একদম 3 মিনিট 50 সেকেন্ড আগে। Computer Abert System এর জন্য নাকি এই উড়ান বাতিল করা হয়েছিল। পরে শেষমেষ 5 জুন তারিখে এই মহাকাশ যাত্রাটি আরম্ভ হয়। কিন্তু ওই দিনেও সম্পূর্ণ বাধাহীন ছিল না তাদের এই যাত্রা। যাত্রা শুরুর কিছু মাত্রইসময় আগে পর্যন্তও বোয়িং কোম্পানি এবং নাসার বিজ্ঞানীরা মহাকাশযানের হিলিয়াম লিক সারানোর জন্য ব্যস্ত ছিলেন। বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে বলেছিলেন যে, এই হিলিয়াম লীগের সমস্যা কোনো বড় কিছু নয়। নিরাপদে মৎস্যনি দ্বারা মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাবেনই এটা থাকলেও। কিন্তু, তারপরে স্টারলাইনারে ধরা পড়ে নানা ধরনের সমস্যা। হিলিয়াম লিকেজের সমস্ত আগে থেকে ছিলই, এর পাশাপাশি আরো নানারকম প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা যায়।

সুনিতা এবং ব্যারিদের ফিরিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা :

যাত্রা শুরুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সুনিতাদের মহাকাশ স্টেশনে থাকার কথা ছিল 8 দিন মত। প্রথমে 14 জুন তাদের ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু starliner এর সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য উড়ান স্থগিত করা হয়েছিল। হিলিয়াম লিকেজ এবং রকেট ইঞ্জিন ঠিকমতো কাজ না করাই উড়ান স্থগিত করা হয়েছিল। তারপর 26 জুন আবারো একবার সুনিতাদের ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেবারেও ওটা করা সম্ভব হয়নি একই সমস্যার জন্যই। তার জন্য আর বেশি ঝুঁকি নেয়নি বোয়িং কোম্পানি এবং নাসা । নাসা এর তরফে জানানো হয়েছিল সংবাদ মাধ্যম সূত্র যে, তাদের Standard Mission Management Team এই বিষয়টি দেখছে। ইতিমধ্যেই Bowing কোম্পানির একাধিক বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। বোয়িং কোম্পানির বিমানের সুরক্ষা ব্যবস্থায় যে ক্ষান্তি রয়েছে সেটা একদম সঠিক। স্টারলাইনারের বাজেট 4.5 বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এই দুই মহাকাশচারীকে ছাড়া স্টারলাইনার পৃথিবীতে ফিরে চলে এসেছে। গত 6 সেপ্টেম্বর New Mexico এর White Sands Space Harber এ সফল অবতরণ করে স্টারলাইনার।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কি কি অসুবিধায় ভুগছেন এই দুই বিজ্ঞানী ?

নাসা তাদের রিপোর্টে বলেছে যে, মহাকাশ স্টেশনে সুনিতা এবং ব্যারির থাকার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। ওখানে সুনিতা এবং ব্যারি ছাড়াও আরো 5 জন মহাকাশচারী রয়েছেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে ওখানে। কিন্তু এই সমস্ত কথার মধ্যেও সুনিতারা কবে পৃথিবীতে পা রাখবেন সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে এবার সে বিষয়টা একটু দেখে নিন ।

সুনিতা এবং ব্যারি পৃথিবীতে কবে পা রাখতে চলেছেন :

এই চলতি 2024 সালে সম্পূর্ণটা মহাকাশ স্টেশনে থাকতে হবেই সুনিতা এবং ব্যারিকে। তাদেরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য কোন রকম তাড়াহুড়া করতে চাইছে না নাসা। 2003 সালের 1 ফেব্রুয়ারি ‘কলম্বিয়া’ মহাকাশ দিনের দুর্ঘটনা মনে পড়ে যায় অনেকেরই। কেননা পৃথিবীতে ফেরার পথে ওই মাকামজয়ন্তী বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে একদম পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল এবং তার সাথে মারা গিয়েছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারি কল্পনা চাওলা এবং তার 6 সহ মহাকাশচারীর।

মূলত সেই ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়েই সুনিতারা এই রিক্স নিয়ে মহাকাশ স্টেশনে গেছে। Space-X কোম্পানি একই মহাকাশযান পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। ওই মহাকাশযানে 4 জন মহাকাশচারী যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে 2 জনকে পাঠানো হবে। সেই হিসেবে দেখতে গেলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সুনিতা এবং ব্যারি পৃথিবীতে পা রাখতে চলেছেন। এই নিয়ে গত 19 সেপ্টেম্বর সুনিতা তার 59তম জন্মদিন পালন করেছে কাজের মধ্যে থেকেই মহাকাশ স্টেশনে । ব্যারি উইলমোরের জন্মদিন হল 29 ডিসেম্বর। সুতরাং ওনারও 61তম জন্মদিনও কাটবে মহাকাশ স্টেশনেই। তারা দুজনেই জানিয়েছে যে ওখানে তাদের কোনরকম সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যতই হোক দিন সেজে তারা দুজনে ওখানে অতিথি মাত্রই। এবং অতিথি হিসেবে সেখানে তো তারা চিরকাল থেকে যেতে পারে না, তাদেরকে পৃথিবীতে ফিরে আসতেই হবে। আপাতত আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এই দুই মহাকাশচারী পৃথিবীতে পৌঁছবে বলে এনে নাসা জানিয়েছে। আমরা আশা করব উনারা দুজনেই যেন পৃথিবীতে সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক।

Barry Wilmore, ISRO, NASA, Space Station, Sunita Williams:

Leave a Comment