RG Kar: প্রায় গত 1 মাস ধরে কলকাতা আরজিকর হসপিটাল এর মহিলা জুনিয়ার ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় বাংলা সহ গোটা দেশ এখন জ্বলছে।
RG Kar
এই ঘটনাটা হওয়া এখন প্রায় 36 দিন হয়ে গেল, কিন্তু এখনো কোনো রকম সুবিচার পেল না ওই ধর্ষিতা ডাক্তার অভয়া। এরই মাঝে গত শনিবার অর্থাৎ 14ই সেপ্টেম্বর 2024 তারিখে গ্রেপ্তার করা হলো টালা থানার Officer in Charge বা OC অভিজিৎ মন্ডল কে।
রবিবার আদালতে CBI এর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিজিতের আইনজীবী। সেই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অর্থাৎ CBI একে একে সাত সাতটি কারণ ব্যাখ্যা করল তার গ্রেপ্তারির জন্য। তথ্য প্রমাণ লোপাট, দেরিতে FIR দায়ের করা এবং ঘটনাস্থল বিকৃত করা ইত্যাদির নানারকম অভিযোগ উঠেছিল এই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ নেওয়া ও তদন্ত করার ক্ষেত্রে বেশ ভালই কায়দা করেছিলেন এই অভিজিৎ মন্ডল। সেই সমস্ত অভিযোগকে সামনে রেখে CGO কমপ্লেক্স এ ডেকে বেশ কয়েকবার CBI এর তরফ থেকে জেরা করা হয় OC অভিজিৎ মন্ডল কে। গত শনিবার CGO কমপ্লেক্সে ডেকে প্রায় 7 ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করে তদন্তকারীরা অভিজিৎ কে। শুধু অভিজিৎ নয় এই একই অভিযোগের দৌলতে গ্রেপ্তার হয়েছে CBI এর কাছে সেই নৃশংস ঘটনা ঘটে যাওয়া কলকাতা আরজিকর মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সন্দীপ এবং অভিজিৎ দুজনকেই শনিবার আদালতে হাজির করানো হয়।
সোমবার অভিজিতের গ্রেপ্তারি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তার আইনজীবী। প্রশ্ন তিনি বলেছেন “আমার মক্কেলের কর্তব্যে গাফিলতির কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আরো ভালোভাবে বিভাগীয় তদন্ত করা যেত। OC কে নিয়ে CBI এর এই নিয়ে অন্য কোনো কিছু বলার নেই। অভিজিতের আইনজীবী যেহেতু আদালতে সন্দ্বীপের গ্রেপ্তারি কেন হয়েছে সেই বিষয়ে এই ধরনের প্রশ্ন তুলেছিল, তার উত্তরে একে একে 7 দফা উত্তর আদালতের সামনে ব্যাখ্যা করেছে CBI অভিজিতের গ্রেফতারীর জন্য।
CBI আদালতে জানিয়েছে যে কলকাতা আরজিকর মেডিকেল হসপিটাল এর ওই নিশংস কাণ্ডে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ হয়েছে বলে মনে হয়। কেননা এর কারণ হিসেবে ঘটনার দিন যেভাবে দেহে উদ্ধারে পর সন্দীপ এবং অভিজিতের ফোনে কথা বলার বিষয়টি তুলে ধরেন CBI। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরও জানাই যে, গত 9 আগস্ট সকাল 10টা 3 মিনিটে সন্দীপ বের থেকে খবর পান টালা থানার OC অভিজিৎ।
খবর পাওয়ার প্রায় 1 ঘন্টা পরে ঘটনাস্থল অর্থাৎ আরজিকর হসপিটালে পৌঁছায় এই পুলিশ অফিসার। এমন জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রেই খবর দেওয়ার পর এত দেরিতে ঘটনাস্থলে কেন পৌঁছলেন OC ? সেই নিয়ে বৃহত্তর প্রশ্ন তুলছে CBI । তারা মনে করিয়ে দেয়, অভিজিৎ নিজের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে CBI এটাও জানিয়েছে যে, দ্রুত ঘটনাস্থল ঘেরার কাজ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন এই পুলিশ অফিসার। অভয়ার ময়না তদন্তের রিপোর্ট টাও দেরি করে দেওয়া হয়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছে CBI ।
এগুলি সমস্ত কিছুর ছাড়াও CBI আরো জানাই যে, 9 আগস্ট দুপুর 2টো 55 মিনিট নাগাদ হাসপাতালের সুপার অভিযোগ জানান। পরে সন্ধ্যা 7টা 30 মিনিট নাগাদ নির্যাতিতা অভয়ার পরিবার অভিযোগ করে। কিন্তু এই এত বড় জঘন্য ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার বেশ কয়েক ঘন্টা পর FIR দায়ের করা হয় থানায়।
আরো , অভিযোগ রয়েছে যে, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা আইন অনুযায়ী নিয়ম রয়েছে যে, যেকোনো অপরাধ স্থলের অবশ্যই ভিডিওগ্রাফি করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি। CBI এই অভিযোগের কথা উল্লেখ করে আদালতে বলেছে যে, “অভিযুক্তকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য এমন করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে”।
নির্যাতিতা জুনিয়র মহিলা চিকিৎসকের পরিবার প্রথম থেকেই দাবি করেছিল যে, খুব তাড়াতাড়ি তাদের মেয়ের দেহ দাহ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? তবে কি পুলিশ এবং সম্পূর্ণ সিস্টেমটাই অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল? CBI সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে এখানেই? এমনকি নির্যাতিতা দেহ সৎকারের জন্য তার পরিবারের কাছ থেকে কোনো রকম টাকাও নেয়া হয়নি। ওই এলাকার তৃণমূল সংসদীয় MLA নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নির্যাতিতার সেই নিথর দেহটা যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশকে দিয়ে দাহ করার ব্যবস্থা করেছিল।
এই সমস্ত বিষয়টি শনিবার আদালতের সামনে রেখে CBI জানাই, নির্যাতিতার পরিবার দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত চেয়েছিল। কিন্তু এত দ্রুত তার মেয়ের দেহটাকে দাহ করে দেওয়া হয়েছিল যে, সেই দ্বিতীয়বার সৎকার আর সম্ভব হয়নি। এই ঘটনায় থানার জেনারেল ডায়েরিতে লেখা হয়েছিল, হাসপাতালের Chest Department এর সেমিনার রুমে নির্যাতিতার অচৈতন্য ও নিথর দেহটা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু অভয়া মৃত জানার পরেও কেন হসপিটাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে অচৈতন্য অবস্থায় কথা লেখা হলো? এখানেও CBI প্রশ্ন তুলেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে কোন বৃহত্তর ষড়যন্ত্র করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূল সরকার এমনটাই অনুমান করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অর্থাৎ CBI ।
কিন্তু যেটাই হোক এতগুলো দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যেহেতু এখনো পর্যন্ত অভয়া কোনো রকম সঠিক বিচার পেল না এবং দিনে দিনে রাজ্য সরকারের ওপর রাজ্যের সমস্ত সাধারণ জনগণের ক্ষোভ যেভাবে বেড়েই চলেছে ? এতে বলা যায় না মাঝখানে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর মত আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থাটা না হয়।
কিন্তু News Barta অবশ্যই মনে প্রাণী চাই নির্যাতিতা সঠিক বিচারপাক এবং অপরাধকারীরা উপযুক্ত ও দণ্ডনীয় শাস্তি পাক। যাতে এ রাজ্যসহ সারাদেশে এরকম নৃশংস কাজ কেউ করার আগে এই ঘটনা তার অচিরেই মনে পড়ে যায়।