Lady justice: বদলে গেল দেশের বিচারের সর্বোচ্চ প্রতীক। নতুন প্রতীকের থাকছে হিন্দুত্বের ছোঁয়া । কিন্তু কেন ?

Lady Justice: সম্প্রতি বদলানো হয়েছে ভারতের বিচারের সর্বোচ্চ ন্যায়ের প্রতীক। কিছুদিন আগেই সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই নতুন প্রতীকের মূর্তি উন্মোচন করে ...

Lady justice: বদলে গেল দেশের বিচারের সর্বোচ্চ প্রতীক। নতুন প্রতীকের থাকছে হিন্দুত্বের ছোঁয়া । কিন্তু কেন ?
Published On:

Lady Justice: সম্প্রতি বদলানো হয়েছে ভারতের বিচারের সর্বোচ্চ ন্যায়ের প্রতীক। কিছুদিন আগেই সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই নতুন প্রতীকের মূর্তি উন্মোচন করে বলেছেন, ‘আইন এখন আর শুধুমাত্র অন্ধ নয়। আইন এবার চোখ মেলে দেখবে ও সবাইকে সমান ভাবে দেখবে।’ সেই ভাবনা থেকে এই ন্যায়ের পথিকের চোখের বাঁধন খুলেছেন তিনি।

কি পরিবর্তন হলো ন্যায়ের প্রতীক লেডি জাস্টিস এর মূর্তির

এবার নতুন ন্যায়ের প্রতীকে তরবারির বদলে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় সংবিধান। এছাড়াও বদলে গেছে নতুন প্রতীকের নানারকম বৈশিষ্ট্য। পুরনো যেই ন্যায়ের মুহূর্তটি ছিল সেখানে লেডিস জাস্টিস এর মূর্তি দাঁড় করানো থাকত যেটা ছিল মূলত রোমান স্থাপত্যের একটি আদি নিদর্শন। যার পরনে ছিল রোমান ঐতিহ্যের একটা সাদা রংয়ের গাউন, কোমরে কাপড়ের বন্ধনী, দু বাহুতে বাজুবন্ধ। কিন্তু এই সকল বৈশিষ্ট্যের বেশ অনেকটাই পরিবর্তন করে যে নতুন মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে যেখানে মূর্তির পরনে রয়েছে কুচি আচল পরানো নকশা পাড়ের সুন্দর শাড়ি, গলায় রয়েছে কয়েক ছড়া হার, কানে থাকছে সুন্দর দুল, হাতে থাকছে বালা । এছাড়া শাড়ির ওপরে যে কোমর বন্ধ ও মাথাই দেখা যাচ্ছে ভারতীয় বিভিন্ন দেবদেবীর মতো মুকুট।

পূর্বে যে মূর্তিটি ভারতের ন্যায় ধারার মূর্তি হিসেবে ব্যবহার করা হতো সেটি বিশ্বের পরিচয় করেছিল রোমান সম্রাট অগস্টস । যেটা ঘটেছিল এখন থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে। পরে ওই ন্যায়ের প্রতীকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল ব্রিটেন সহ ইউরোপের আরো অন্যান্য বহু দেশে। আর ভারতে এই মূর্তিটির আগমন ঘটেছিল ব্রিটিশদের হাত ধরেই। এখন থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ভারতে ব্রিটিশ শাসকরা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করে ও তখন থেকেই ভারতীয় ন্যায়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এই লেডি জাস্টিস এর মূর্তিটি। ঘটনাটি ঘটে গিয়েছিল প্রায় তিন শতক আগে। কিন্তু এবার সেই ব্রিটিশদের মূর্তিকে বাদ দিয়ে ভারতীয় নেয় ধরার প্রধান প্রতিক হিসেবে জায়গা করে নিল নতুন একটি মূর্তি। আর এই বদলকে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব থেকে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার মুক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়।

ন্যায়ের প্রতীকের মূর্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কি বললেন প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য

ন্যায়ের প্রতীকের পরিবর্তে যে সেই মুক্তি হয়েছে, তা মানছেন আইনজীবী এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন যে, ‘আগে চোখে কাপড় বাধার অর্থ ছিল, ধনী-দরিদ্র , ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সামাজিক মর্যাদা যেন বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত না করে। কিন্তু সেটি ঔপনিবেশিক সময়ের ভাবনা শুধুমাত্র। তখন সমাজে বৈষম্য ছিল। গণতান্ত্রিক দেশে এমনই সবাই সমান, তার জন্য কোনো আলাদা প্রতীকের প্রয়োজন হয় বলে আমরা মনে করি না। সুতরাং প্রতীকের চোখ বাঁধা রাখলে চলবে না। চোখ খুলে সবকিছু দেখতে হবে’ । তবে একইসঙ্গে এর পাশাপাশি তিনি আরো বলেছেন যে, ‘ন্যায়ের প্রতীকের ভারতীয় দেবীর মতো পোশাক না পড়ালেও চলত। ওটাতে অনাবশ্যক হিন্দুত্ব করণ না করলেও হত। এই বদলের ফলে হয়তো তাৎপর্য এই মূর্তিটার কিছুটা হলেও লঘু হয়ে গিয়েছে ‘ ।

গত কয়েক মাস ধরেই ভারতীয় ন্যায়সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ন সহ নানা রকম পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে ভারতীয় আইন ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাধিন থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি এর বিভিন্ন নেতারা বলেছেন, ‘ওই সবই হল ব্রিটিশ শাসকের প্রভাব মুক্ত হয়ে আদতে ভারতীয় আইনের আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া’। ন্যায়ের পথিকের ভারতীয়করণকেও সে আত্মশুদ্ধি বলেই মনে করেছেন বিজেপির বিভিন্ন নেতারা। তাদের বক্তব্য যে, ‘ভারতীয় আইন ব্যবস্থা কে ভারতীয় করনে রূপ দেওয়ার জন্য যদি জাতীয় ন্যায়ের প্রতীকে ভারতীয় পোশাক পরানো হয়, তাহলে এক্ষেত্রে ক্ষতি কি ? ।

আরও পড়ুন: রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর আবেদন জম্মু কাশ্মীরকে

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে লেডি জাস্টিস এর মূর্তি পরিবর্তনে কি বললেন বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার

রাজ্য বিজেপির সভাপতি এবং লোকসভার সংসদ মাননীয় সুকান্ত মজুমদার বলেছেন এই নিয়ে, ‘ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের যে মূর্তি, তাতে ভারতীয় বৈশাখ থাকবে না তো কি পাকিস্তানের প্রচার থাকবে? আসলে এটা একটা শ্রেণীর মানুষের মজ্জায় কমিউনিজম রয়ে গিয়েছে, যেটা গোটা পৃথিবী ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।” কিন্তু কোন জিনিসের সাংস্কৃতিগত বদলের জন্য কি পোশাক বদলানোটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী? যে কারণে ন্যায়ের প্রতি একটি ভাস্কর্য, তাই আমরা প্রশ্ন করেছি, এই নতুন ভাস্কর্য শিল্পী কে।

শিল্পী সনাতন দিন্দা জানিয়েছেন, ‘ন্যায়ের প্রতীকের হাতে সংবিধান ধরানো বা চোখের বন্ধন খুলে দেওয়া নেপথ্যে নিশ্চয়ই কোনো ভাবনা কাজ করছে। দেশের প্রধান বিচারপতি সেই কারণও জানিয়েছেন। তবে পোশাকে ধরন বদলে দিয়ে আলাদা কিছু হয় বলে অন্তত আমরা মনে করি না। আগের মূর্তিটি রোমান গ্রিক স্থাপত্য ছিল। এখন ভারতীয় সংস্কৃতির শাড়ি, গয়না, মুকুট পরানো হয়েছে। তবে আমি মনে করি যে, আসল বদল ভিতর থেকে আসা দরকার। না হলে এসবই বৃথা চেষ্টা। তবে ভারতীয় ন্যায়ের প্রতীকের পোশাকে সঙ্গে ভারতীয় দেবীর বেজভুজ সামঞ্জস্য থাকাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেছেন না বিভিন্ন ইতিহাসবিদরা।

Bikash Ranjan Bhattacharya, High Court, india, Lady justice, Sukanta Majumdar, Supreme Court

Leave a Comment